পোস্টগুলি

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

গমক- মাধুর্য রেখে গাম্ভীর্যের সঙ্গে কোনো স্বরকে বিশেষভাবে আন্দো লিত  করার নাম গমক।প্রাচীনকালে বাইশ প্রকার গমকের প্রচলন ছিল।কর্ণাটক সঙ্গীত পদ্ধতিতে এগুলির কিছু প্রচলিত আছে।তবে হিন্দুস্তান পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয়েছে।এই পদ্ধতিতে গমক প্রকাশ করা হয় বুকে ধাক্কা দেবার মত(গায়নশৈলীতে)। গমককে  এক্ষেত্রে মুরকি ,খটকা, জমজমা  নামে অভিহিত করা হয়। টপ্পায়  ও সেতারে জমজমা  প্রয়োগ হয়। কম্পিত গমক-কণ্ঠে ও বাদ্যযন্ত্রে এই গমকের প্রয়োগ হয়।বাদ্যযন্ত্রে এক আঘাতে দুটি স্বর প্রকাশ করে এই গমকের প্রয়োগ হয়। আন্দোলিত গমক-কোনো স্বরকে তার আগের বা পরের স্বরের সঙ্গে স্পর্শ করে আন্দোলিত করলে এই গমক তৈরি হয়। আহত গমক-মূল স্বরকে প্রকাশ করার সময় ঐ স্বরের আগের বা পরের স্বরের সাহায্যে আঘাত করে মূল স্বর বাজালে এই গমক হয়। উল্লাসিত গমক-প্রতি স্বর অন্যকে স্পর্শ করে ওঠে বা নীচে নামে। তিরিপ গমক-দ্রুত লয়ে এক চতুর্থাংশ স্বরের প্রয়োগ হয়। ত্রিভিন্ন গমক-এক বা একাধিক স্বর খুব দ্রুত বেগে  তিনটি সপ্তকে প্রয়োগ হয়। প্লাবিত গমক-মীড়কে ঐ গমক নামে আগে অভিহিত করা হত।অর্থাৎ এক স্বর থেকে আর একটিতে গড়িয়ে যাওয়া। বোলিং গমক-এতে স্বরকে বক্রভাবে ব্যবহার করা

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

খান্ডারবাণী-কথিত আছে মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারে বীণকার নওবদ খাঁ এই বাণীর প্রচলন করেন।প্রধানতঃ বীণকার ও ধ্রুপদীয়াগণ এর পরিবেশন করতেন।নওবদ খাঁ ছিলেন তানসেনের জামাতা।তাঁর আগে নাম ছিল সমোখন সিংহ।তাঁর গ্রামের নাম ছিল খাণ্ডার।তাই তাঁর গায়নরীতির নাম হয় খান্ডারবাণী।আল্লাদিয়া খাঁ,সদারঙ্গ,ছোট রামদাস ছিলেন এই রীতির গায়ক। ডাগুরবাণী-কথিত আছে দিল্লির কাছের ডাগুর গ্রামের অধিবাসী হরিদাস এর প্রবর্তক।তিনি তানসেনের সমসাময়িক ছিলেন।এই বাণীর বৈশিষ্ট্য হল সরলতা।এর গায়করা হলেন জালালুদ্দিন খাঁ,আলাবন্দে খাঁ। নওহরবাণী-সুজন দাস বা সুজান খাঁ(পরবর্তীতে) এর প্রবর্তক।মতান্তরে নওহর গ্রামের গুণী শ্রীচন্দ এর প্রবর্তক।দ্রুত লয়ের এই গায়নরীতিতে নাহার অর্থাৎ সিংহের গতি অনুসৃত হয় বলে এমন নামকরণ।মতান্তরে নবরসের সংমিশ্রণ ঘটে বলে এমন নাম।এর গায়করা হলেন কেরামত আলী খাঁ,কল্লন খাঁ,ওস্তাদ বিলায়েৎ হুসেন খাঁ।  গওহরবাণী-তানসেন এর প্রবর্তক।কারো মতে নায়ক কুম্ভন দাসের বংশধর এর প্রবর্তক।উর্দূ ভাষায় রচিত "মাদনূল মওসিকি" গ্রন্থের লেখক হাকিম মোহাম্মদ-এর মতে তানসেন প্রথম জীবনে গৌড়ীয় ব্রাহ্মণ হওয়ার জন্য "গৌড়ী" শব্দ থেকে গওহর 

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

ভারতীয় সঙ্গীতের উত্তরমধ্যকালে ধ্রুপদ গায়কগণ প্রধানতঃ চারটি পদ্ধতিতে ধ্রুপদ পরিবেশন করতেন,একে বাণী বলে।এগুলি ডাগুরবাণী,খান্ডারবাণী,গওহর বা গোবরহার বাণী নওহর বাণী নামে পরিচিত।প্রাচীনকালে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঁচটি গায়নশৈলীর উল্লেখ পাওয়া যায়  শুদ্ধা-সরল,অনাড়ম্বর,সুললিত স্বরের গীত।ডাগুরবাণী পদ্ধতির সঙ্গে এর মিল আছে।এই রীতিতে গমক,কণ,মীড় প্রয়োগ হতনা। ভিন্না-সূক্ষ্ম,গমকযুক্ত,বক্র গীত।এর সঙ্গে গওহর বাণীর মিল আছে। গৌড়ী-গম্ভীর প্রকৃতির গীত।এর সঙ্গে খান্ডারবাণীর মিল আছে। সাধারণী-এই রীতিতে মন্দ্র সপ্তকে কম্পিত  ও দ্রুত সুরবিন্যাস করে ই বা উ কার যোগে গাওয়া হয়। বেসরা-এতে দ্রুত লয়ে আরোহ-অবরোহ করা হয়।এর সঙ্গে নওহর বাণীর মিল আছে।স্বরের বক্রগতি এতে দেখা যায়।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

কৃষ্ণানন্দ ব্যাস ধ্রুপদ,খেয়ালের গ্রন্থ সংকলন করেন, "সঙ্গীতের কল্লদ্রুম" ।এছাড়া রবীন্দ্রসঙ্গীত,নজরুলগীতি,দ্বিজেন্দ্রগীতি,অতুলপ্রসাদী,রজনীকান্ত  সেনের গান উল্লেখযোগ্য।রাগ-রাগিণী বিষয়ক আলোচনা আছে কৃষ্ণধন ব্যানার্জ্জী-র "গীতসূত্রসার" ,স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ রচিত "রাগ ও রূপ" গ্রন্থ।গোপেশ্বর ব্যানার্জ্জী রচিত "সঙ্গীত চন্দ্রিকা" ,পি সাম্বমূর্তি-র "South Indian Music", স্যার সুরেন্দ্রমোহন ঠাকুর রচিত "Universal History of Music"  উল্লেখযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পন্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ডে ও পন্ডিত বিষ্ণুদিগম্বর পালুস্কর বিশেষ উল্লেখযোগ্য।প্রথম জন সঙ্গীত শাস্ত্র বিষয়ে,দ্বিতীয় জন ক্রিয়াত্মক(Practical)বিষয়ে বিশেষ উন্নতি সাধন করেন।পালুস্কর রচিত গ্রন্থ হল সঙ্গীত বালপ্রকাশ,সঙ্গীত বালবোধ। ভাতখন্ডে রচিত গ্রন্থ হল হিন্দুস্তানী সঙ্গীত পদ্ধতি,ক্রমিক পুস্তক মালিকা,ভাতখন্ডে সঙ্গীতশাস্ত্র,অভিনব রাগমঞ্জরী,স্বরমালিকা,লক্ষ্যসঙ্গীত।আধুনিককালের উল্লেখযোগ্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীরা হলেন ওস্তাদ আব্দুল করিম খাঁ, ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ,ওস্তাদ আমীর খাঁ,ওস্তাদ বড়ে

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

আধুনিককাল- খ্রীষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের পর থেকে শুরু আধুনিককাল।অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ঊনবিংশ শতকের শেষ অবধি একটা অংশ এবং বিংশ শতকের শুরু থেকে আজ অবধি পরের অংশ।এ সময় ব্রিটিশদের শাসনাধীনে ভারতে সঙ্গীতের প্রসার ব্যহত হয়।সঙ্গীতজ্ঞরা নিজ নিজ পরিবারের মধ্যে সঙ্গীতচর্চা করতেন।তার বাইরে তাঁরা সঙ্গীত শেখাতেননা।ফলতঃ সঙ্গীত শুধু নর্তকী,বাইজিদের মধ্যে সীমিত ছিল বাইরের পরিবেশে।তাই সঙ্গীতচর্চা সে সময় ঘৃণার বিষয়ে পরিণত হয়।এ যুগে জয়পুরের প্রতাপসিংহ দেব "সঙ্গীতসার" নামে গ্রন্থ রচনা করেন ও বিলাবলকে  শুদ্ধ ঠাট বলে গণ্য করেন। এ যুগে বাংলাদেশের হালিশহর নিবাসী সাধক রামপ্রসাদ তাঁর আরাধ্য দেবী কালী ঠাকুরের ভক্তিগীতি রচনা করেন।তৎকালীন কলিকাতায় নগরবাসী,চাকুরিজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে কবিগান,পাঁচালি,যাত্রা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।নিধুবাবুর টপ্পা এ সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বাকুঁড়ার বিষ্ণুপুরের রাজা দ্বিতীয় রঘুনাথ সিংহ(১৭৫২-১৭৮৪)দিল্লি থেকে সেনী  ঘরানার গায়ক বাহাদুর খাঁ কে আমন্ত্রণ জানান।এ থেকে বিষ্ণুপুর ঘরানার উৎপত্তি হয়।এ ঘরানা থেকে প্রসিদ্ধ গায়ক রা হলেন যদু ভট্ট,ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী,গদাধর চক্রবর্তী।  

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

১৬১০ সালে দক্ষিণ ভারতের তেলেগু ব্রাহ্মণ পন্ডিত সোমনাথ "রাগবিরোধ" গ্রন্থে উত্তর-দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীতের সমন্বয় ঘটান।মেল ও ঠাট শব্দের উদ্ভাবন করেন।১৬২৭-১৬৫৮ সালে সম্রাট শাহজাহানের দরবারে ছিলেন যথাক্রমে তানসেনের পুত্র ও পুত্র বিলাস খাঁ ও লাল খাঁ।১৬৫০ সালে  পন্ডিত অহোবল রচিত "সঙ্গীত পারিজাত" গ্রন্থে প্রথম বীণার তারের উপর বারোটি স্বর স্থাপনা হয়।অহোবল বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বীণার তারের দৈর্ঘ্য ও আন্দোলনের সাহায্যে নতুন স্বর স্থাপনা করেন। ১৬৫৮-১৭০৭ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেব সঙ্গীতের প্রতি বিরূপ থাকলেও সঙ্গীত চর্চা বন্ধ হয়নি এ সময়।১৬৬০ সালে দক্ষিণ ভারতের পন্ডিত গোবিন্দ দীক্ষিতের পুত্র পন্ডিত ব্যঙ্কটমখী "চতুর্দণ্ডী প্রকাশিকা" গ্রন্থ রচনা করেন।তাঁর মতে ৭২ টি ঠাট ও একটি ঠাট থেকে ৪৮৪ টি রাগ তৈরি হতে পারে। মহম্মদ শাহরঙ্গীলে ছিলেন একজন সঙ্গীতেপ্রেমীক শাসক।তাঁর দরবারে ছিলেন দুজন প্রসিদ্ধ গায়ক সদারঙ্গ ও অদারঙ্গ।তাঁদের রচিত খেয়াল বহুল প্রচলিত। অষ্টাদশ শতকে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করেন ত্যাগরাজ,শ্যামশাস্ত্রী,মুত্তুস্বামী দীক্ষিত।তানসেনের সঙ্গে তুলনীয় ত্যাগরাজ।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

গোয়ালিয়রের রাজা মানসিংহ ১৪৮৬-১৫১৮ খ্রিঃ অবধি রাজত্ব করেন।এ সময় গোয়ালিয়র ঘরানা প্রবর্তিত হয়।তিনি বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞদের সাহায্যে  "মানকুতূহল" নামে গ্রন্থ রচনা করেন।এ সময় ভক্তি আন্দোলনের প্লাবন বয়ে যায়। উত্তর ভারত প্লাবিত হয় কবীর,মীরাবাঈ,শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর গানে।ভজন,কীর্তনের প্রসার বেশি ঘটে।কীর্তনের প্রসার ঘটে বেশি বাংলা,বিহার,আসাম ও উড়িষ্যায়।চৈতন্যদেব,মীরাবাঈ যথাক্রমে কৃষ্ণভক্তি রসাত্মক  কীর্তন ও ভজনের প্রচার করেন। ১৫৫৬-১৬০৫ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের সভায় সঙ্গীত সম্রাট তানসেন,নায়ক বক্সী,তানতরঙ্গ গোপাল প্রমুখ ৩৬ জন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন।তানসেেনের নামানুসারে তাঁর বংশের গায়ক ও শিষ্যরা "সেনী ঘরানা" র নামে পরিচিত হন।তানসেন "মিঞা কি মল্লার" "মিঞা কি সারং" "দরবারী কানাড়া" প্রভৃতি রাগ তৈরি করেন।আকবরের নবরত্ন সভার এক রত্ন ছিলেন তানসেন। ১৫৮৪ সালে তুলসীদাস "রামচরিতমানস মানস" রচনা করেন।এছাড়া ছিলেন কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী,স্বামী হরিদাস গোস্বামী।ঠাকুর নরোত্তম দাস ক্লাসিকাল কীর্তনের প্রবর্তন করেন।একে রস বা লীলা কীর্তন বলে।লীলাকীর্তন অবলম্বনে গরাণহাটি