পোস্টগুলি

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

আবির্ভাব-তিরোভাব : একটি রাগের কিছু স্বরসমষ্টি অন্য রাগে পাওয়া যায়।যথা-নি (খাদের)রে (কোমল)গ  ম (কড়ি)রে (কোমল)গ পুরিয়া ও পুরিয়াধানেশ্রী উভয়তেই আছে।এক্ষেত্রে বোঝা যায় না যে কোন রাগ গাওয়া হচ্ছে।কিন্তু গ ম (কড়ি)ধ  গ ম (কড়ি)গ যোগ হলে পুরিয়া স্পষ্ট প্রকাশ পায়।ঐ স্বরগুচ্ছ না প্রয়োগে পুরিয়াধানেশ্রী রাগের তিরোভাব এবং যোগে পুরিয়া রাগের আবির্ভাব।সমপ্রকৃতির রাগে এই প্রক্রিয়া ঘটে। প্রাচীনকালে সঙ্গীত শাস্ত্রে 'রাগ' শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় না।মতঙ্গ ঋষির "বৃহদ্দেশী" গ্রন্থে প্রথম রাগের উল্লেখ পাওয়া যায়।আগে রাগ গাওয়া হতনা,জাতি গাওয়া হত।ভরতের নাট্যশাস্ত্রে সাতটি শুদ্ধ জাতি ও এগারোটি বিকৃত জাতির উল্লেখ আছে। সাতটি জাতি-ষাড়জী,আর্ষভী,গান্ধারী,মধ্যমা,পঞ্চমী,ধৈবতী,নৈষাদী।প্রথম চারটি ষড়জ গ্রাম জাত,বাকী তিনটি মধ্যমগ্রাম জাত।ষাড়জী থেকে পনেরোটি বিকৃত জাতি,বাকীগুলির প্রত্যেকটি থেকে তেইশটি করে শুদ্ধ বিকৃত জাতি উৎপন্ন হয়।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

রাগলক্ষণ- ভরতের নাট্যশাস্ত্রে দশটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে, এর মধ্যে গ্রহ,অংশ,ন্যাস স্বর নিয়ে উল্লেখ আছে যা আগে পোস্ট করেছি,তাই পুনরাবৃত্তি করলাম না,বাকিগুলি নীচে দৃশ্য : অপন্যাস স্বর-রাগে যে স্বরগুলির উপর গায়ক বা বাদক কিছুসময় থামতে পারে।ন্যাস স্বরই আগেকার অপন্যাস স্বর। সংন্যাস স্বর-যে স্বরের উপর স্থায়ীর শেষ লাইন শেষ হয়। বিন্যাস স্বর-যে স্বরের উপর গানের চারটি ভাগের প্রথম লাইন শেষ হয়। বহুত্ব স্বর-কোনো স্বর বারবার ব্যবহার হলে তাকে বহুত্ব স্বর বলে।এটি দুই ভাগে বিভক্ত : যে স্বর আরোহ-অবরোহে বর্জন করা যায়না আবার ন্যাস করাও যায়না।বাদী-সমবাদী ছাড়া অনুবাদী স্বর বারবার প্রয়োগ হতে পারে।একে অলঙ্ঘনমূলক বহুত্ব বলে।যথা-ইমন রাগে 'ম'-র ব্যবহার।একে কখনই লঙ্ঘন করা যায়না,তা না হলে অন্য রাগের প্রভাব দেখা যেতে পারে।কিন্তু এই স্বরে এই রাগে ন্যাস ও করা যায়না। যে রাগে যে স্বর পুনঃপুনঃ প্রয়োগ হয়,তা অভ্যাসমূলক বহুত্ব স্বর।বাদী-সমবাদীকে এই স্বর আখ্যা দেওয়া হয়।যথা-বাগেশ্রী রাগে 'ধ'। অল্পত্ব-যে স্বর রাগে কম ব্যবহার হয়।আলাপ,বিস্তার করার সময় এটির প্রয়োগ বোঝা যায়।এই স্বর আরোহ-অবরোহে লঙ্ঘিত হয়।আশাবরী রাগ

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

পরমেল প্রবেশক রাগ- মেল শব্দের অর্থ ঠাট।পরমেল হল পরবর্তী মেল বা ঠাট।অর্থাৎ পরমেল প্রবেশক রাগে আগের ও পরের ঠাটের,উভয়েরই  স্বর বজায় রাখা হয়। প্রাচীন ভারতে আর্য ঋষিগণ সাতটি স্বরের সঙ্গীতে প্রয়োগ রীতি নির্দিষ্ট করেন এবং সঙ্গীত পরিবেশনের রীতি,তাল,ছন্দ,লয় নির্ধারণ,সঙ্গীত রচনার রীতিও নির্দিষ্ট করেন।এক্ষেত্রে ভরত,মতঙ্গ,দত্তিল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।এই রীতি অনুসরণ করেই ধ্রুপদ,ঠুংরী,খেয়াল গাওয়া হয়।একেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বলে। প্রাচীনকালে দুরকম গীত প্রচলিত ছিল :নিবদ্ধ গান বা তালবদ্ধ গান ও অনিবদ্ধ গান বা তালহীন গান। নিবদ্ধ গান তালের সঙ্গে গাওয়া হত।ধ্রুপদ,ধামার,খেয়াল,তারানা,টপ্পা ইত্যাদি নিবদ্ধ গান।নিবদ্ধ গানের পাঁচটি ভাগ ছিল-উদগ্রাহ,মেলাপক,ধ্রুব,অন্তরা,আভোগ।এগুলি এখনকার স্থায়ী,অন্তরা,সঞ্চারী,আভোগের পুরানো রূপ। অনিবদ্ধ গানের চার প্রকার : রাগালাপ-যে আলাপ দ্বারা রাগের দশ লক্ষণ অর্থাৎ গ্রহ,অংশ,ন্যাস,মন্দ্র,তার,অপন্যাস,অল্পত্ব,বহুত্ব,ষাড়বত্ব,ঔড়বত্ব প্রকাশ পায়। রূপকালাপ-এতে শুধু সুর থাকে,ভাষা ব্যবহার হয়না।একটি বিষয় কে অন্য একটি বিষয় হিসাবে বর্ণনা করলে তাকে রূপক বলে। আলপ্তি গান-এটি এক ধরনের আলাপ,যাতে রাগের সব ব

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

শুদ্ধ তান-   রাগের স্বরসমূহ দ্বারা যে তান সৃষ্টি হয় তা শুদ্ধ তান। বোল তান- গানের বাণী ও তাল-ছন্দ সহযোগে যে তান হয় তা বোল তান। গমক তান- গমকের সাহায্যে যে তান পরিবেশিত হয়। বক্র তান- যে তানের গতিতে আরোহ-অবরোহ সরলভাবে দেখা যায়  না,বক্রভাবে দেখা যায়। সপাট তান- যে তান মন্দ্র সপ্তক থেকে দ্রুত তার সপ্তকে পৌঁছায় এবং দ্রুত ফিরে আসে। স্বর ও সময় অনুযায়ী  হিন্দুস্থানি সঙ্গীতে রাগকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে : সন্ধিপ্রকাশ রাগ-এটি দিন ও রাতের সন্ধিক্ষণে গাওয়া হয়।এই রাগগুলির 'রে','ধ' কোমল হয়।সময় সকাল-সন্ধ্যা চারটে থেকে সাতটা। শুদ্ধ রাগ-এই রাগ সন্ধিপ্রকাশ রাগের পরে গাওয়া হয়।এতে 'রে','ধ' শুদ্ধ ব্যবহৃত হয়।সময় সকাল-সন্ধ্যা সাতটা থেকে দশটা বা বারোটা।এই রাগে 'গ' ও শুদ্ধ ব্যবহৃত হয়।যথা-বেহাগ,ভূপালী,ইমন ইত্যাদি। এর পরের রাগে কোমল 'গ','নি' ব্যবহৃত হয়।সময় সকাল-সন্ধ্যা দশটা বা বারোটা থেকে চারটে অবধি।এই রাগে কোমল স্বর লাগবেই।যথা-ভীমপলাশী,জৌনপুরী ইত্যাদি। আলাপ- এই শব্দের অর্থ সঙ্গীত শাস্ত্রে,রাগরূপ বিস্তার।রাগ গাওয়ার আগে তোম,আ,নেতে প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে রাগের

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

কণ বা স্পর্শ স্বর- কণ শব্দের অর্থ স্পর্শ করা।কোনো স্বর উচ্চারণকালে আগের বা পরের স্বরকে অল্প স্পর্শ করে তবে তাকে স্পর্শ স্বর বলে।মূল স্বরের মাথায় একেবারে উপরে বা কোণ করে স্পর্শ স্বর লেখা হয়। মীড়- এক স্বর থেকে অপর স্বরে গড়িয়ে যাওয়া হল মীড়।এই বিষয়টিকে স্বরলিপিতে অর্ধবৃত্তাকার চিহ্ন বা ফার্স্ট ব্র্যাকেটের মত চিহ্ন দ্বারা বোঝানো হয়।ভাতখন্ডে স্বরলিপি পদ্ধতিতে অর্থাৎ হিন্দুস্থানী সঙ্গীত  পদ্ধতিতে স্বরের উপরে উল্টো নৌকার মত করে মীড় চিহ্ন বসে।আকারমাত্রিক পদ্ধতিতে স্বরের নীচে সোজা নৌকার মত করে মীড় বসে। সন্ধিপ্রকাশ রাগ- সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় যে যে রাগ গাওয়ার নিয়ম আছে তাদের সন্ধিপ্রকাশ রাগ বলে।প্রাতঃকালীন সন্ধিপ্রকাশ রাগ-ভৈরব,কালিংগড়া ইত্যাদি এবং সায়ংকালীন সন্ধিপ্রকাশ রাগ-পূর্বী,মারবা ইত্যাদি। গ্রাম- প্রাচীনকালে বাইশটি শ্রুতির ভিত্তিতে সাতটি শুদ্ধ স্বরকে স্থাপনা করা হলে,ঐ স্বরসমষ্টিকে গ্রাম বলে।অর্থাৎ সাতটি স্বরের সমাহার।সামবেদ থেকে স্বরের ও স্বর থেকে গ্রামের উৎপত্তি।তবে গ্রামের সংখ্যা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। মূর্চ্ছনা- সাতটি স্বরের আরোহ অবরোহের ক্রম হল মূর্চ্ছনা।শুদ্ধ ও বিকৃত মিলিয়ে

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

গ্রহ স্বর - যে স্বর থেকে রাগ গাওয়া শুরু হয় তা গ্রহ স্বর। অংশ স্বর- প্রাচীনকালে মনে করা হত,যে স্বর রাগে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং অন্য সব স্বর যে স্বরের অধীন তাই অংশ স্বর। ন্যাস স্বর- যে স্বরে এসে রাগ শেষ করা হয়। বক্র স্বর- রাগে কিছু স্বর ক্রম অনুযায়ী  প্রয়োগ না হয়ে যখন আগে পরে করে ব্যবহৃত হয় তখন তা বক্র স্বর। বর্জিত স্বর- রাগে যে স্বরের ব্যবহার নিষিদ্ধ তাই বর্জিত স্বর।যথা-খাম্বাজ রাগে আরোহে 'রে' বর্জিত। স্থায়ী- এটি গানের প্রথম অংশ।এখান থেকে গান শুরু হয় ও গানের প্রতি অংশ গাওয়ার পর স্থায়ীতে ফিরতে হয়।এটি সাধারণত মন্দ্র ও মধ্য সপ্তকে গাওয়া হয়। অন্তরা- গানের দ্বিতীয় অংশ।এটি সাধারণত গাওয়া হয় মধ্য সপ্তকের গ ম প থেকে তার সপ্তকের র্গ র্ম র্প পর্যন্ত। সঞ্চারী- গানের তৃতীয় অংশ।এটিও মন্দ্র ও মধ্য সপ্তকে গাওয়া হয়।এই অংশের সঙ্গে স্থায়ীর কিছু সাদৃশ্য থাকে। আভোগ- গানের চতুর্থ অংশ।মধ্য সপ্তকের প থেকে তার সপ্তক অবধি এর বিস্তার।এই অংশের সঙ্গে অন্তরার অনেক সাদৃশ্য থাকে।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

  পূর্বাঙ্গ রাগ- রাগের বাদী স্বর সপ্তকের পূর্বাঙ্গে অর্থাৎ সা রে গ ম প-র মধ্যে থাকে এবং সেই রাগ দুপুর বারোটা থেকে রাত্রি বারোটার মধ্যে গাওয়া হলে তা পূর্বাঙ্গ রাগ। উত্তরাঙ্গ রাগ- রাগের বাদী স্বর সপ্তকের উত্তরাঙ্গে অর্থাৎ ম প ধ নি সা-র মধ্যে থাকে এবং সেই রাগ রাত বারোটা থেকে দুপুর বারোটার মধ্যে গাওয়া হলে তা উত্তরাঙ্গ রাগ। বাদী স্বর- রাগে যে স্বর বেশি ব্যবহৃত হয় তা বাদী স্বর।এটি রাগের প্রাণস্বরূপ।একে রাজা বলা হয়।যথা-কেদার রাগের বাদী স্বর 'ম'। সমবাদী- রাগে যে স্বর বাদী স্বরের থেকে কম,কিন্তু অন্য স্বরের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।এটি রাগের মন্ত্রীস্বরূপ।রাজ্যে যেমন রাজার পরেই মন্ত্রীর প্রাধান্য থাকে,ঠিক তেমন বাদী স্বরের পর সমবাদী স্বরের প্রাধান্য থাকে।যথা-কেদার রাগের সমবাদী স্বর 'সা' অনুবাদী- উপরের দুটি স্বর ছাড়া যে স্বরগুলি রাগ প্রকাশে সহায়ক তাই অনুবাদী স্বর।একে প্রজা বা সেবক মনে করা হয়। বিবাদী- এই শব্দের অর্থ শত্রু।রাগে যে স্বর প্রয়োগ হলে রাগভ্রষ্ট হয় তাই বিবাদী স্বর।তবে অনেকসময় রাগের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যও বিবাদী স্বরের প্রয়োগ হয়।