Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran
রবীন্দ্রসঙ্গীতে তালের বৈচিত্র্য লক্ষণীয়।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে গানের ভাব অনুযায়ী তালের ছন্দ নির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ। কোনো কোনো গান তাল ছাড়াও হতে পারে।তিনি মূলত দক্ষিণ ভারতীয় তালের কাঠামো অনুসরণ করে তাল তৈরী করেছেন। আবার,হিন্দুস্তানী কিছু তালের ছন্দ পরিবর্তন করেছেন।সুরফাঁকতালের ছন্দ ২|২|২|২|২,তবে রবীন্দ্রনাথ ৪|২|৪ ছন্দে তালটিকে তৈরী করেছেন। আড়াচৌতালের ছন্দ ২|২|২|২|২|২|২,রবীন্দ্রসৃষ্ট ছন্দ ২|৪|৪|৪।
ধামার তালের ছন্দ ৫|২|৩|৪,রবীন্দ্রসৃষ্ট ছন্দ ৩|২|২|৩|৪। ঝাঁপতালকে ৫|৫ ছন্দে,একতালকে ৪|৪|৪ ছন্দে তৈরী করেছেন।আবার তিনি নিজের তৈরী তালেরও ছন্দ পরিবর্তন করেছেন। যেমন নবতাল থেকে ৯ মাত্রার ছন্দ, একাদশী থেকে ৩|৪|৪ ছন্দের তাল। ষষ্ঠী তাল থেকে ৪|২ ছন্দের তাল।
রবীন্দ্রনাথ ভানুসিংহ ঠাকুর ছদ্মনামে কিছু গান রচনা করেন, যা মৈথিলি বা ব্রজবুুুলী ভাষায় লেখা। অক্ষয়চন্দ্র সরকার ও সারদাচরণ মিত্র দ্বারা সংকলিত প্রাচীন কাব্যের বইয়ের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন।সেটি মৈথিলি ভাষায় ছিল। ভানুসিংহের পদাবলীর গানে বৈষ্ণব পদাবলীর প্রভাব দেখা যায়। মোট ২২ টি গান আছে,এর মধ্যে ৯ টি গানের স্বরলিপি আছে ২১ নং স্বরবিতানে।বাকী গানের স্বরলিপি পাওয়া যায় নি।গানগুলি:-"আজু সখি মুহু মুহু","গহন কুসুমকুঞ্জ মাঝে ","বজাও রে মোহন বাঁশি ",মরণ রে তুঁহুঁ মম","শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা","শুন লো শুন লো বালিকা","সজনী সজনী রাধিকা লো","সতিমির রজনী,সচকিত সজনী","হৃদয়ক সাধ মিশাওল হৃদয়ে"(স্বরলিপি আছে এগুলির);"কোমল তুঁহুঁ বোলবি মোয়","বঁধুয়া হিয়া-পর আও রে","বসন্ত আওল রে","বাদরবরখন,নীরদগরজন","বার বার সখী, বারণ করনু","মাধব,না কহ আদরবানী","শুন সখি,বাজে বাঁশি ","শ্যাম,মুখে তব মধুর অধরমে","শ্যাম রে,নিপট কঠিন মন তোর","সখী রে,পিরীত বুঝবে কে","সখী লো,সখী লো,নিকরুণ মাধব","হম যব না রব সজনী ","হম সখী, দারিদ নারী"।
রবীন্দ্রসঙ্গীতে আধ্যাত্মিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে বেদ,উপনিষদ পাঠ করেছেন এবং সেই দিব্যজ্ঞাণের অনুভূতি গানে প্রকাশ পেয়েছে।তাই রবীন্দ্রনাথ একজন ঋষি হিসেবে প্রতিভাত হন। তাঁর অসংখ্য গানে ঈশ্বরের প্রতি অপার ভক্তি,ভালবাসা ,আকর্ষণ ব্যক্ত হয়েছে।তিনি বাউলদের জীবনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন বলে নিজের পোশাক বাউলদের মতো পরিধান করতেন।কবি বলেছেন যে, গান লেখাতে যেমন তাঁর আনন্দ, তেমন আর কিছুতে অনুভব করেন না তিনি। আর তিনি দেখে গেছেন যে তাঁর গানের সুর বিকৃত হচ্ছে বিভিন্ন গায়কের কন্ঠে। তাতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে মিনতি করে গিয়েছেন সকলের কাছে যে তাঁর গান যেন তাঁর সৃষ্টি বলেই বোঝা যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন