Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের পরিবারে সঙ্গীত চর্চা ওতপ্রোত বিষয়।কবি বলেছেন যে কোনোদিন গান গাননি তেমন তাঁর মনে পড়েনা।তাঁর দাদারা হিন্দুস্তানী সঙ্গীত শিক্ষা করেছেন। বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্গান ও বাঁশী বাজাতেন।আকারমাত্রিক স্বরলিপির উদ্ভাবন ইনিই করেন ১২৭৬ সালে। কবি গান শিখেছেন বিষ্ণু চক্রবর্তী, যদুভট্ট ও শ্রীকন্ঠ সিংহের কাছে। শ্রীকন্ঠ সিংহ ভোরে মশারী থেকে কবিকে বার করে গান শেখাতেন। যদুভট্টের কাছে ঠাকুরবাড়িতে আরো অনেকে গান শিখতে যেতেন।মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর গান শেখানোর সুব্যবস্থা করেছিলেন। মাঘোৎসব উপলক্ষে ঠাকুর বাড়িতে গান,নাচ,নাটক অনুষ্ঠিত হত।কবির কিশোর বয়সে লেখা কতকগুলি গান শুনে মহর্ষি তাঁকে ৫০০ টাকার চেক দিয়েছিলেন। কবির সব ভাই-বোনেরা ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেছেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের কাকা রামলোচন ঠাকুরের সময় থেকে গানের জলসা হত।দ্বারকানাথের উদ্যানবাটী বেলগাছিয়া ভিলাতেও গানের জলসা হত। তিনি ইটালিয়ান ও ফরাসী সঙ্গীত গাইতেন এবং ম্যাক্সমুলার সাহেব পিয়ানো বাজাতেন।মাতার মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। কৈশোরে তিনি ধ্রুপদ ও বিলম্বিত খেয়াল শেখেন। প্রথম দিকের ব্রহ্মসঙ্গীতগুলি ধ্রুপদাঙ্গের। ১৬ বছর বয়স থেকে গান রচনা করেছেন। প্রায় আড়াই হাজার গান তিনি পুরো জীবনে রচনা করেন ও দেশী-বিদেশী সুরারোপ করেন।প্রচলিত তালে যেমন গান রচনা করেছেন, তেমন নিজের তৈরী করা তালেও গানকে বেঁধেছিলেন। নিজের গানকে ৬ টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন-পূজা,আধ্যাত্মিক অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত;প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি পর্যায়ের গানে ফুটে উঠেছে;প্রেম,নর-নারীর প্রেমের অনুভূতির বর্ণনা;দেশাত্মবোধক গান স্বদেশ পর্যায়ের;বিচিত্র পর্যায়ের গানে মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখের আরো নানা দিকের বর্ণনা;আর আছে আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গান।জীবনের এমন কোনো মুহূর্ত নেই যা,রবীন্দ্রসঙ্গীতে ধরা পড়েনি।
কীর্তন,বাউল, রামপ্রসাদী,সারি,খেয়াল,টপ্পা ইত্যাদি গানের আদলে গান তৈরী করেছেন।তাঁর গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্য-বাল্মীকি প্রতিভা, মায়ার খেলা, কালমৃগয়া;চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা,চণ্ডালিকা।
পূজা পর্যায়ের গানের বিষয়গুলো-প্রার্থনা, সাধনা,সংকল্প, গান,আত্মবোধন,জাগরণ,সাধক,আনন্দ,সুন্দর, বিশ্ব,বন্ধু, বিরহ,দুঃখ, অন্তর্মুখী, নিঃসংশয়, উৎসব,পথ,বাউল, শেষ, পরিণয়।খেলা,চাষ করা,ফসল কাটা,হাসি,জন্মদিন, পথ,গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর রচিত গান রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের ও পাশ্চাত্য গানের সুরে গান তৈরী করেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে খেয়ালের থেকে ধ্রুপদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তিনি এবং তাঁর বড় দাদারা যদুভট্ট, বিষ্ণু চক্রবর্তীর ধ্রুপদ গান ভেঙে ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেন। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের রচিত গান "শূন্য হাতে ফিরি হে নাথ"-কাফী রাগের সুরফাঁকতালে রচিত "রুমঝুম বরখে আজু বাদরবা পিয়া বিদেশ মোরি" গানের আদলে তৈরী।মিঞামল্লার রাগে "বোল রে পপীহরা"-এই গানের আদলে রচনা করেন "কোথা যে উধাও হল";ভৈরব রাগে "জাগো মোহন প্যায়ারে"-র আদলে লেখেন "মন জাগো মঙ্গললোকে"।কাফী রাগের টপ্পা "হোমীয়া জানেবালে তানু"-র আদলে লেখেন "এ পরবাসে রবে কে" ও আর একটি টপ্পা অঙ্গের গান "সার্থক জনম আমার "।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন