পোস্টগুলি

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

জন্য রাগ- জন্য অর্থে জাত বা যার জন্ম হয়েছে।ঠাট থেকে রাগের জন্ম হয়।তাই প্রত্যেক রাগই জন্য রাগ।যেমন-ভৈরব ঠাট থেকে ভৈরব রাগ,পূর্বী ঠাট থেকে পূর্বী রাগ,কাফী ঠাট থেকে বাগেশ্রী ইত্যাদি।   লক্ষণগীত- রাগের নাম,বাদী,সমবাদী,জাতি,সময়,আরোহ-অবরোহ প্রভৃতির উল্লেখ থাকলে তা লক্ষণগীত।এতে রাগের সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়। পকড়- রাগবাচক মুখ্য স্বরগুলিকে পকড় বলে।অল্প কিছু স্বরসমষ্টিকে পকড় বলে,যা দিয়ে রাগ চিনতে পারা যায়।যেমন-ভূপালী রাগের পকড় : সা গা রে,সা ধা,সা রে গা,পা গা,ধা পা গা,রে সা। ছায়ালগ ও সঙ্কীর্ণ রাগ- যে রাগ কোনো শুদ্ধ রাগের সামান্য ছায়া অবলম্বনে গাওয়া হয় তা ছায়ালগ বা সালঙ্ক রাগ।যথা-ছায়ানট রাগ। শুদ্ধ ও ছায়ালগ রাগের মিশ্রণে যে রাগ গাওয়া হয় তা সঙ্কীর্ণ রাগ।যথা-পিলু।দুই বা তার বেশি রাগের মিশ্রণ হল সঙ্কীর্ণ রাগ।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

আশ্রয়রাগ- হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের প্রচলিত রাগগুলি কোনো না কোনো ঠাটের অন্তর্গত।প্রত্যেক ঠাটের এমন একটা করে রাগ আছে,যার নামে ঠাটের নামকরণ করা হয়েছে।সেই রাগগুলোই ঠাটগুলির আশ্রয়রাগ।যেমন আশাবরী ঠাট থেকে আশাবরী রাগের উৎপত্তি।তাই আশাবরী রাগ আশাবরী ঠাটের আশ্রয়রাগ।   জনকঠাট- যেসব ঠাট থেকে রাগের উৎপত্তি হয় তা হল জনকঠাট।হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে প্রচলিত দশটি ঠাটই জনকঠাট। আরোহ- কিছু স্বরসমষ্টি নীচ থেকে যখন আরোহণক্রমে উপরে ওঠে তখন তাকে আরোহ বলে।যেমন-সা রে গা মা পা ধা নি র্সা। অবরোহ- কিছু স্বরসমষ্টি যখন অবরোহণক্রমে উপর থেকে নীচে নামে তখন তাকে অবরোহণ বলে।যেমন র্সা নি ধা পা মা গা রে সা। রাগের জাতি- রাগের আরোহ-অবরোহে সর্বদা সমান সংখ্যক স্বর ব্যবহত হয়না।পাঁচটি/ছয়টি/সাতটি স্বর ব্যবহৃত হয়।একে রাগের জাতি বলে।তিন জাতির রাগ হয় : সম্পূর্ণ -যে রাগের আরোহ-অবরোহে সাতটি করে স্বর ব্যবহার হয়।যেমন ভৈরবী রাগ।এটি হল সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ জাতি। ষাড়ব/খাড়ব-যে রাগের আরোহ-অবরোহে ছয়টি করে স্বর ব্যবহার হয়।যেমন মারবা।এটি ষাড়ব-ষাড়ব/খাড়ব-খাড়ব জাতি।'প' বাদ এই রাগে। ঔড়ব-এতে পাঁচটি করে স্বর ব্যবহার হয়।যেমন ভূপালী,'ম' ও 'ন

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

অলঙ্কার- অলঙ্কার রাগ-রাগিণীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।কিছু নিয়মিত বর্ণের সমষ্টি হল অলঙ্কার।অলঙ্কারের উদ্দেশ্য হল দ্রুত রাগকে বিস্তারিত করার জ্ঞাণ অর্জন করা।একে পাল্টাও বলা হয়।স্বর এবং গলা সাধনা করার জন্য যে সরগম অভ্যাস করা হয়,তাই অলঙ্কার। ভারতে প্রচলিত দুটি সঙ্গীতপদ্ধতি স্বতন্ত্র হয় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে।উত্তর ভারতে ঠাট ও দক্ষিণ ভারতে মেল পদ্ধতি চালু হয়(ঠাটকেই মেল বলা হয়)।ফলে ক্রমে উভয় পদ্ধতির স্বর,তাল,রাগ,গায়ন ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে। রাগ- ঠাট থেকে রাগের উৎপত্তি হয়েছে।স্বর ও বর্ণের মনোমুগ্ধকর রচনা হল রাগ।ধ্বনির বিশেষ রচনাকেও রাগ বলা হয়।রাগের বৈশিষ্ট্য: রাগে পাঁচটির কম স্বর থাকবেনা।পাঁচটি,ছয়টি ও সাতটি স্বর দ্বারা রাগ তৈরি হয়। রাগে 'সা' বর্জিত হয়না। 'মা' ও'পা' একসঙ্গে বর্জিত হয়না। আরোহ-অবরোহ উভয়ই থাকে। একটি বাদী ও একটি সমবাদী স্বর থাকে। রাগ পরিবশনের নির্দিষ্ট সময় থাকে। রাগে ব্যবহৃত স্বরকে বক্র গতিতে প্রয়োগ করা যায়। আরোহ-অবরোহণের স্বরসংখ্যা সমান হয়না সর্বদা।  

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

সঙ্গীত- সঙ্গীত তিনটি কলা অথবা বিষয়ের সমাবেশ,গীত,বাদ্য ও নৃত্য।সঙ্গীত এমন কিছু বিশিষ্ট স্বররচনা যা প্রত্যেক প্রাণীর চিত্তকে প্রফুল্ল করে।এই তিনটি বিষয়ের দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ পায়।গীত-সুর,অর্থপূর্ণ শব্দ ও তাল।বাদ্য-সুর,তাল ও যন্ত্রের সহযোগিতা।নৃত্য-তাল,ছন্দ ও মনমোহিতকারী দেহভঙ্গিমা।শ্রীকৃষ্ণ মহর্ষি নারদকে বলেছেন যে তিনি যোগী হৃদয়ে বা বৈকুন্ঠে বাস করেননা।তাঁর ভক্তরা যেখানে গান করেন সেখানেই বিরাজ করেন।সঙ্গীত রত্নাকর গ্রন্থে উল্লিখিত," গীতং,বাদ্যং তথা নৃত্যং ত্রয়ং সঙ্গীতমুচ্যতে "(এর অর্থ প্রথম লাইনে বলেছি)।শ্রেণী-জাতি নির্বিশেষে সঙ্গীত সকলের কাছে সমানভাবে সমাদৃত ও সম্মানিত।গ্রীক দার্শনিক প্লেটো বলেছেন" Music for Soul "অর্থাৎ সঙ্গীত মন অথবা আত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তিকারক। ভারতে দুরকম সঙ্গীতপদ্ধতি প্রচলিত-উত্তর ভারতীয় বা হিন্দুস্থানী এবং দক্ষিণ ভারতীয় বা কর্ণাটী।সমগ্র উত্তর(বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে)ও পূর্ব ভারতে হিন্দুস্থানী পদ্ধতি এবং মাদ্রাজ,মহীশূর,অন্ধ্রপ্রদেশে (বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে)কর্ণাটী পদ্ধতি প্রচলিত।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

কম্পন- স্বর বারবার অথবা দুলে দুলে কম্পিত হয়ে উচ্চারিত হলে তাকে কম্পন বলে।যেমন- মা মা মা,পা পা পা। আন্দোলন- দুটি বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে যখন আহত বস্তুটি দুলতে থাকে ও যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তাই আন্দোলন।ধ্বনির সৃষ্টি হয়েছে আন্দোলন থেকে।আন্দোলন চার প্রকার: যে আন্দোলনের গতিবেগ সমান থাকে তা নিয়মিত আন্দোলন। যে আন্দোলনের গতিবেগ সমান থাকেনা তা হল অনিয়মিত আন্দোলন। যে আন্দোলনের স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ তা স্থির আন্দোলন। যার স্থায়িত্ব বেশি নয় তা অস্থির আন্দোলন।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

বর্ণ-  গানের প্রত্যক্ষ ক্রিয়া হল বর্ণ।বর্ণ চার প্রকার: এক স্বর বারবার উচ্চারিত হলে তা স্থায়ী বর্ণ।যেমন সা সা সা। নীচ থেকে উপরের দিকে স্বর প্রয়োগ হলে তা আরোহী বর্ণ।যেমন সরাগমা রগমপা। উচুঁ থেকে নীচের দিকে স্বর প্রয়োগ হলে অবরোহী বর্ণ।নধপমা ধপমগা। উপরের তিনটি বর্ণের সংমিশ্রণকে সঞ্চারী বর্ণ বলে।পমগরে সরগমা গমপধা পনধপা। গানের বাণীকে স্থায়ী,অন্তরা,আরোহী,অবরোহী,সঞ্চারী ও আভোগে ভাগ করা হয়।ধ্রুপদ গানে স্থায়ী,আরোহী,অবরোহী ও সঞ্চারী বর্ণ থাকে।খেয়াল গানে স্থায়ী ও অন্তরা থাকে।রবীন্দ্রসঙ্গীত,নজরুলগীতি,ভজন,আধুনিক গানে স্থায়ী,অন্তরা,সঞ্চারী,আভোগ থাকে।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

 ঠাটের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য: ঠাটে সাতটি স্বর অবশ্য থাকবে অর্থাৎ সা রে গ ম প ধ নি। আরোহ-অবরোহ উভয়ই নাও থাকতে পারে। কোনো ঠাটকে চেনার জন্য,ঐ ঠাট থেকে উদ্ভূত রাগকে ঠাটের নামেই চিহ্নিত করা হয়।সেক্ষেত্রে,ঐ রাগে সাতটি স্বর নাও থাকতে পারে। ঠাটে কোনো রঞ্জকতার প্রয়োজন নেই। কোনো রাগে সা বর্জিত হয় না।  বাদী স্বর পূর্বাঙ্গে থাকলে, সমবাদী উত্তরাঙ্গে হবে এবং উল্টোটাও হয়।বাদী স্বরের স্থান পরিবর্তন করে সময় নির্ণয় হয়।  সা,ম,প-এই স্বরগুলি উভয় অঙ্গেই থাকে। বিবাদী স্বর অবরোহে শুধু প্রয়োগ হয়।  শুদ্ধ ম যুক্ত রাগ ভোরে ও তীব্র ম যুক্ত রাগ সন্ধ্যায় গাওয়া হয়।  স্বরের প্রকৃতি অনুযায়ী রাগসমূহকে  তিনভাগে ভাগ করা হয়-কোমল রে ও কোম ল ধ যুক্ত রাগ;শুদ্ধ রে ও শুদ্ধ ধ যুক্ত রাগ;কোমল গ ও কোমল নি যুক্ত রাগ।তৃতীয় প্রকৃতির রাগগুলি দুপুরে বা মাঝরাতে গাওয়া হয়।  প্রথম প্রহরে গীত রাগে আরোহে নি,অবরোহে গ বক্র হয়।  পাশাপাশি দুটি স্বরের অবস্থান কম রাগে হয়।  সকালের রাগে কোমল রে,ধ ও সন্ধ্যার রাগে কোমল গ,নি স্বর বেশি ব্যবহার হয়।  হিন্দুস্তানী রাগে স্বরের প্রাধান্য বেশি। দক্ষিণ ভারতীয় রাগে তালের প্রাধান্য বেশি।