পোস্টগুলি

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

বর্ণ-  গানের প্রত্যক্ষ ক্রিয়া হল বর্ণ।বর্ণ চার প্রকার: এক স্বর বারবার উচ্চারিত হলে তা স্থায়ী বর্ণ।যেমন সা সা সা। নীচ থেকে উপরের দিকে স্বর প্রয়োগ হলে তা আরোহী বর্ণ।যেমন সরাগমা রগমপা। উচুঁ থেকে নীচের দিকে স্বর প্রয়োগ হলে অবরোহী বর্ণ।নধপমা ধপমগা। উপরের তিনটি বর্ণের সংমিশ্রণকে সঞ্চারী বর্ণ বলে।পমগরে সরগমা গমপধা পনধপা। গানের বাণীকে স্থায়ী,অন্তরা,আরোহী,অবরোহী,সঞ্চারী ও আভোগে ভাগ করা হয়।ধ্রুপদ গানে স্থায়ী,আরোহী,অবরোহী ও সঞ্চারী বর্ণ থাকে।খেয়াল গানে স্থায়ী ও অন্তরা থাকে।রবীন্দ্রসঙ্গীত,নজরুলগীতি,ভজন,আধুনিক গানে স্থায়ী,অন্তরা,সঞ্চারী,আভোগ থাকে।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

 ঠাটের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য: ঠাটে সাতটি স্বর অবশ্য থাকবে অর্থাৎ সা রে গ ম প ধ নি। আরোহ-অবরোহ উভয়ই নাও থাকতে পারে। কোনো ঠাটকে চেনার জন্য,ঐ ঠাট থেকে উদ্ভূত রাগকে ঠাটের নামেই চিহ্নিত করা হয়।সেক্ষেত্রে,ঐ রাগে সাতটি স্বর নাও থাকতে পারে। ঠাটে কোনো রঞ্জকতার প্রয়োজন নেই। কোনো রাগে সা বর্জিত হয় না।  বাদী স্বর পূর্বাঙ্গে থাকলে, সমবাদী উত্তরাঙ্গে হবে এবং উল্টোটাও হয়।বাদী স্বরের স্থান পরিবর্তন করে সময় নির্ণয় হয়।  সা,ম,প-এই স্বরগুলি উভয় অঙ্গেই থাকে। বিবাদী স্বর অবরোহে শুধু প্রয়োগ হয়।  শুদ্ধ ম যুক্ত রাগ ভোরে ও তীব্র ম যুক্ত রাগ সন্ধ্যায় গাওয়া হয়।  স্বরের প্রকৃতি অনুযায়ী রাগসমূহকে  তিনভাগে ভাগ করা হয়-কোমল রে ও কোম ল ধ যুক্ত রাগ;শুদ্ধ রে ও শুদ্ধ ধ যুক্ত রাগ;কোমল গ ও কোমল নি যুক্ত রাগ।তৃতীয় প্রকৃতির রাগগুলি দুপুরে বা মাঝরাতে গাওয়া হয়।  প্রথম প্রহরে গীত রাগে আরোহে নি,অবরোহে গ বক্র হয়।  পাশাপাশি দুটি স্বরের অবস্থান কম রাগে হয়।  সকালের রাগে কোমল রে,ধ ও সন্ধ্যার রাগে কোমল গ,নি স্বর বেশি ব্যবহার হয়।  হিন্দুস্তানী রাগে স্বরের প্রাধান্য বেশি। দক্ষিণ ভারতীয় রাগে তালের প্রাধান্য বেশি। 

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

ঠাট- এই শব্দের অর্থ কাঠামো।সপ্তক থেকে ঠাটের উৎপত্তি।কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বর যা রাগ তৈরিতে সমর্থ,তাই ঠাট।হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে দশটি ঠাটকে অনুসরণ করে রাগ সঙ্গীত তৈরি হয়েছে- বিলাবল ঠাট:সব স্বর শুদ্ধ ব্যবহৃত হয়।সা রে গ ম প ধ নি। মারবা:রে কোমল,ম তীব্র ও বাকী স্বর শুদ্ধ।এক্ষেত্রে 'রে'-র তলায় ড্যাশ চিহ্ন ও 'ম'-র উপরে দাঁড়ি চিহ্ন হবে কোমল ও তীব্র স্বর বোঝাতে। টোড়ী:রে গ ধ কোমল,ম তীব্র ও বাকী শুদ্ধ স্বর। ভৈরবী:রে গ ধ নি কোমল ও বাকী শুদ্ধ স্বর। পূর্বী:রে ধ কোমল,ম তীব্র ও বাকী শুদ্ধ স্বর। ভৈরব:রে ধ কোমল,বাকী শুদ্ধ স্বর। আশাবরী:গ ধ নি কোমল,বাকী শুদ্ধ। কাফী:গ নি কোমল,বাকী শুদ্ধ। কল্যাণ-ম তীব্র,বাকী শুদ্ধ। খাম্বাজ:নি কোমল,বাকী শুদ্ধ। হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে অথবা ভাতখন্ডে স্বরলিপি পদ্ধতিতে কোমল স্বরের তলায় ড্যাশ চিহ্ন তীব্র স্বরের মাথায় দাঁড়ি চিহ্ন বসানো হয়।রে গ ধ নি হল কোমল স্বর ও ম তীব্র স্বর।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

সপ্তক -  সঙ্গীতে সপ্তক তিন প্রকারঃ মন্দ্র বা উদারা সপ্তক-এটি উচ্চারণ করতে হৃদয়ে বিশেষ জোর লাগে।এর আওয়াজ মধ্য সপ্তকের চেয়ে দ্বিগুণ নীচে হয়।এই সপ্তক কে বোঝাতে স্বরের নীচে ফুটকি বা বিন্দু চিহ্ন ভাতখন্ডে স্বরলিপিতে ব্যবহৃত হয় এবং হসন্ত আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে ব্যবহৃত হয়। মধ্য বা মুদারা সপ্তক-এটির উচ্চারণে কন্ঠে বিশেষ জোর লাগে।এর আওয়াজ মন্দ্র সপ্তকের চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চে হয়।এর কোনো সাংকেতিক চিহ্ন নেই। তার বা উচ্চ সপ্তক-এর উচ্চারণে তালুতে বিশেষ জোর লাগে।এর আওয়াজ মধ্য সপ্তকের চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চে হয়।এই সপ্তক কে বোঝাতে ভাতখন্ডে স্বরলিপিতে স্বরের মাথায় বিন্দু এবং আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে স্বরের মাথায় রেফ চিহ্ন বসে। এইভাবে সা থেকে নি পর্যন্ত সাতটি শুদ্ধ স্বর ক্রমানুসারে সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয় বলে,একে সপ্তক বলে।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

  স্বর- শ্রুতিমধুর ধ্বনি ই সঙ্গীতে স্বর নামে পরিচিত।স্বর সঙ্গীতের অপরিহার্য বিষয় ও প্রাণস্বরূপ।সঙ্গীতের রাগ ও অলঙ্কার প্রকাশ করার উপযোগী শব্দ হল স্বর। স্বর দুপ্রকার-শুদ্ধ বা প্রাকৃত ও বিকৃত স্বর। শুদ্ধ স্বর দুপ্রকার-চল ও অচল স্বর।চল স্বর-সা ও প ছাড়া বাকীগুলি অর্থাৎ রে গ ম ধ নি।এই স্বরগুলি বিকৃত হয়।অচল স্বর হল সা ও প।এরা বিকৃত হয়না। বিকৃত স্বর ও দুপ্রকার-কোমল ও তীব্র।কোমল স্বর-ঋ(রে),জ্ঞ(গ),দ(ধ),ণ(নি)।তীব্র বা কড়ি হল ক্ষ (ম)। সাতটি শুদ্ধ ও পাঁচটি বিকৃত মিলিয়ে মোট বারোটি স্বর সঙ্গীতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

শ্রুতি- অসংখ্য নাদের মধ্যে যে নাদগুলি পৃথকভাবে স্পষ্ট শোনা যায়,তাই শ্রুতি।মোট বাইশটি শ্রুতি সঙ্গীতশাস্ত্রে প্রচলিত-তীব্রা,কুমুদ্বতী,মন্দা,ছন্দোবতী-এই চারটি শ্রুতির উপর 'সা'(ষড়জ)স্বরটি প্রতিষ্ঠিত;দয়াবতী,রঞ্জনী,রক্তিকা-এগুলির উপর 'রে'(ঋষভ)প্রতিষ্ঠিত;রৌদ্রী,ক্রোধী-র উপর 'গা'(গান্ধার)প্রতিষ্ঠিত;বজ্রিকা,প্রসারিণী,প্রীতি,মার্জনী-র উপর 'মা'(মধ্যম);ক্ষিতি,রক্তা,সন্দিপিনী,আলাপিনী-র উপর 'পা'(পঞ্চম);মদন্তী,রোহিনী,রম্যা-র উপর 'ধা'(ধৈবত);উগ্রা,ক্ষোভিনী-র উপর 'নি'(নিষাদ) প্রতিষ্ঠিত।

Sangeet Shastra/Sangeet Byakaran

ধ্বনি-   সঙ্গীতের সৃষ্টি হয়েছে ধ্বনি থেকে।ধ্বনির সৃষ্টি হয়েছে দুটি জিনিসের সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন তরঙ্গ থে কে।এই তরঙ্গ আমরা শুনতে পাই ধ্বনি হিসাবে। ধ্বনি দুপ্রকার-মধুর ও কর্কশ। নাদ- নাদের অর্থ শব্দ,সূক্ষতম শব্দের কম্পন।নাদ দুপ্রকার-আহত ও অনাহত। আহত নাদ বক্ষ,কন্ঠ,তালু পেরিয়ে শব্দরূপে কন্ঠে প্রকাশ পায়।এটি ব্যক্ত নাদ।আহত নাদ দু প্রকার-বর্ণাত্মক ও ধ্বন্যাত্মক।বর্ণাত্মক নাদ কন্ঠে প্রকাশ পায়।ধ্বন্যাত্মক নাদ দুটি জিনিসের আঘাতের ফলে উৎপন্ন হয়।এক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ উল্লেখযোগ্য। অনাহত নাদ অব্যক্ত,গুপ্ত।বিনা আঘাতে উৎপন্ন হয়।সিদ্ধব্যক্তিরা এই নাদ সাধনা করে মোক্ষপ্রাপ্ত হন।